এটুকুই কথা
কত সময়ে কতদিকে নিয়ে গিয়েছে পথ— কখনও বাইরে, কখনও বা ভেতরের দিকে। ভেতরও কি আর সব একরকম? তবে সব চলারই পথে পথে বিছানো ধুলো প্রান্তর, করুণ নদী, মাটি ফেটে ওঠা জল আর মানুষের ঘরবাড়ি। এইসব নিয়েই চরাচর, আমাদের। ‘আবলা পা কোই ঈস দেস মে আয়া হোগা’ ক্ষতবিক্ষত পদতল নিয়ে কোনো পথিক নিশ্চয়ই এসেছিল এইখানে, না হলে কে আর এই ঝড়ঝাপটায় প্রদীপটি জ্বেলে গিয়েছে! ‘ওয়ার্না আঁধি মে দীয়া কিসনে জ্বলায়া হোগা?’ কোথাও সেই প্রদীপটি জ্বলছে, সেই আশ্বাসে, সেই আগ্রহে পথ চলা। নিজের সঞ্চয়ের একটুখানি তেলও ঢেলে দেবার জন্য।
যত চলেছি, রাস্তা ততই দীর্ঘ হয়েছে। শাখাপ্রশাখা মেলে দিয়েছে আরও আরও অজানায়। পথের দুপাশ থেকে যা কুড়িয়েছি, অকৃপণে যা ঢেলে দিয়েছে জীবন, শব্দ দিয়ে ধরে রেখেছি তার কিছু কিছু। এছাড়া আমার আর কী বা দেবার আছে ওকে, জীবনকে? শুনেছি ইহুদি ধর্মে লেখাকেই বলা হয়েছে জীবন-চিহ্ন। বলা হয়েছে যে আশীর্বাদ অন্য সব জড় ও জীবের থেকে মানুষকে পৃথক করেছে, সে হল তার ভাষা। আজ আমরা বলতে পারি না সে ভিন্নতায় আমাদের ভালো হয়েছে কি মন্দ কিন্তু এটুকু জানি— ভাষা মানুষকে দিয়েছে তার স্মৃতিভাণ্ডার। একক আর সম্মেলক। চরাচরময় ছড়ানো নানা অভিজ্ঞতা আর ভাবনার স্মৃতিই আমার লেখা। অকিঞ্চিৎকর সেইসব ব্যক্তিগত স্মৃতির একটি গুচ্ছই রইল এই দুই মলাটের মাঝখানে।
এই লেখাগুলো নানা কাগজে ‘কলাম’ হিসাবে বেরোচ্ছিল যখন, পাঠকেরা অনেকেই চাইতেন একত্রে গাঁথা হোক এগুলো। ‘সৃষ্টিসুখ’-এর প্রকাশকেরাও চাইলেন তাই। এমন সুছাঁদে সাজিয়ে টুকরো লেখাগুলোকে তাঁরা বই করে তুলেছেন, আমি কৃতজ্ঞ রইলাম। এই বইয়ের সুবাদে ইতিমধ্যেই লাভ হয়েছে একটি সজীব জিজ্ঞাসু চিত্তের বন্ধুত্ব। কাছের আর দূরের পাঠকরাই আমাকে তাঁদের সঙ্গে নিজের চিন্তা ভাগ করে নেবার সাহস জোগান। তাঁদেরই কাছে দিলাম।
জয়া মিত্র
কল্যাণপুর, আশ্বিন ২০১৯